তারেক রহমানের নাগরিকত্ব বিতর্ক: ব্রিটিশ সরকারি নথিপত্রের বিশ্লেষণ ও ফ্যাক্ট-চেক
ব্রিটিশ সরকারের ওয়েবসাইটে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে বলা যায়, তারেক রহমান যুক্তরাজ্যে দ্বৈত নাগরিক হিসেবে বসবাস করছেন। তার বাংলাদেশি নাগরিকত্ব নেই—এই দাবিটি সঠিক নয়, কারণ ২০১৬ সালের নথিতে এবং বর্তমান স্ট্যাটাসে তাকে বাংলাদেশি হিসেবেই উল্লেখ করা হয়েছে। নিরাপত্তা ও আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে দেশে ফিরতে তার কোনো বাধা নেই।
ফ্যাক্টচেক
এম আখতার মুকুল
12/2/20251 মিনিট পড়ুন
তারেক রহমানের নাগরিকত্ব বিতর্ক: ব্রিটিশ সরকারি নথিপত্রের বিশ্লেষণ ও ফ্যাক্ট-চেক
দাবিঃ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তারেক রহমানের বাংলাদেশের নাগরিকত্ব নেই বলে দাবি করা হয়েছে একাধিক ফেসবুক পোস্ট থেকে দাবি করা হয়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নাগরিকত্ব নিয়ে চলমান বিতর্কের প্রেক্ষিতে যুক্তরাজ্যের সরকারি কোম্পানি নিবন্ধন দপ্তর ‘কোম্পানিজ হাউস’ (Companies House)-এর নথিপত্র যাচাই করে নিম্নোক্ত তথ্য পাওয়া গেছে।
তথ্যের উৎস ও কোম্পানি পরিচিতিঃ
তারেক রহমানের নাগরিকত্ব যাচাইয়ের প্রধান উৎস হলো ২০১৫ সালে যুক্তরাজ্যে নিবন্ধিত তার একটি কোম্পানি।
কোম্পানির নাম: White and Blue Consultants Limited (হোয়াইট অ্যান্ড ব্লু কনসালটেন্টস লিমিটেড)।
কোম্পানি নম্বর: 09665750।
প্রতিষ্ঠাকাল: ২০১৫ সাল।
শেয়ারহোল্ডার: তারেক রহমান (৫০%) এবং জুবাইদা রহমান (৫০%)।
নথিপত্রের বিশ্লেষণঃ
যুক্তরাজ্যের সরকারি ওয়েবসাইটে (Gov.uk) এই কোম্পানি সংক্রান্ত দুটি ভিন্ন সময়ের ফাইলে নাগরিকত্ব বা ‘Nationality’ ঘরে ভিন্ন তথ্য দেখা যায়। নিচে ইংরেজি টার্মগুলোর বাংলা অর্থসহ বিশ্লেষণ দেওয়া হলো:
২০১৫ সালের নথি (Incorporation Document) কোম্পানি খোলার সময় জমা দেওয়া ফাইলে তারেক রহমানের তথ্যের ঘরে লেখা ছিল:
Nationality: British
বাংলা অর্থ: জাতীয়তা: ব্রিটিশ।
২০১৬ সালের নথি (Annual Return/Confirmation Statement) পরের বছর, অর্থাৎ ২০১৬ সালে জমা দেওয়া নথিতে দেখা যায়:
Nationality: Bangladeshi
বাংলা অর্থ: জাতীয়তা: বাংলাদেশি।
পর্যালোচনাঃ এই নথিপত্রগুলো বিশ্লেষণ করলে এটি স্পষ্ট হয় যে, তারেক রহমানের দ্বৈত নাগরিকত্ব (Dual Citizenship) থাকার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি একইসাথে ব্রিটিশ এবং বাংলাদেশি পরিচয়ে নথিপত্র ব্যবহার করেছেন। যারা দাবি করছেন ‘তার বাংলাদেশি নাগরিকত্ব নেই’, ২০১৬ সালের নথিটি সেই দাবি ভুল প্রমাণ করে।
কোম্পানির বর্তমান অবস্থাঃ
ব্রিটিশ সরকারের ওয়েবসাইটে কোম্পানিটির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে বলা হয়েছে:
Status: Dissolved
বাংলা অর্থ: বিলুপ্ত (কোম্পানিটি বন্ধ হয়ে গেছে)।
বন্ধ হওয়ার সময়: ২০২১ সাল।
কোম্পানিটি বন্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত তারেক রহমান এবং তার স্ত্রী উভয়েই এর মালিকানায় ছিলেন।
আইনি অবস্থান ও দেশে ফেরা
বর্তমানে যুক্তরাজ্যের সরকারি পোর্টালে তারেক রহমানের পরিচয় ‘বাংলাদেশি’ হিসেবেই লিপিবদ্ধ রয়েছে।
যুক্তরাজ্যের আইন: ব্রিটিশ আইনে কারও দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকলে ভ্রমণে বা বসবাসের ক্ষেত্রে কোনো আইনি বাধা নেই।
বাংলাদেশ সরকারের অবস্থান: বাংলাদেশের বর্তমান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা স্পষ্ট করেছেন যে, তারেক রহমানের দেশে ফেরার ক্ষেত্রে কোনো বাধা নেই। সরকার প্রয়োজনে তাকে ‘ট্রাভেল পাস’ (Travel Pass) বা ভ্রমণ অনুমোদন পত্র ইস্যু করতে প্রস্তুত।
ব্রিটিশ সরকারের ওয়েবসাইটে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে বলা যায়, তারেক রহমান যুক্তরাজ্যে দ্বৈত নাগরিক হিসেবে বসবাস করছেন। তার বাংলাদেশি নাগরিকত্ব নেই—এই দাবিটি সঠিক নয়, কারণ ২০১৬ সালের নথিতে এবং বর্তমান স্ট্যাটাসে তাকে বাংলাদেশি হিসেবেই উল্লেখ করা হয়েছে। নিরাপত্তা ও আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে দেশে ফিরতে তার কোনো বাধা নেই।




